ভারতে ব্যাক্ট্রীয় গ্রিক আধিপত্য, শক-পহ্লব আধিপত্য

ভারতে ব্যাকট্রীয় গ্রিক আধিপত্য

ব্যাক্ট্রীয় গ্রিকদের আগমন : মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল কার্যত অরক্ষিত হয়ে পড়ে। দেশের এই রাজনৈতিক দুর্বলতার সুযােগে ব্যাকট্রীয় গ্রিক বা ইন্দো-গ্রীক, শক, পহ্লব, কুষাণ প্রভৃতি বৈদেশিক জাতিগুলি ভারতে ঢুকে আধিপত্য স্থাপন করে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে এবং ধীরে ধীরে নিজেদের স্বতন্ত্র সত্তা হারিয়ে তারা ভারতীয় জনসমাজের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান, ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে পরিপুষ্ট করেন।

যবন নামের উৎপত্তি:-

  • বেদ বিশ্বাসী ভারতীয়দের কছে বিদেশি মাত্রই ছিল যবন কারণ তারা বেদ মানত না।
  • প্রাচীন গ্রীসে আইওনিয় (Ionian)নামে গ্রীক জাতির একটি শাখা বসবাস করত।
  • পারস্যে এই আইওনিয় শব্দটি ইউনান বা য়ুনান শব্দে রূপান্তরিত হয়।
  • এই ইউনান বা য়ুনান থেকে সংস্কৃত যবন শব্দের উৎপত্তি।
  • ব্যাকট্রীয় গ্রিক বা ইন্দো-গ্রীকরা ভারতে "বাহ্লীক যবন" নামে পরিচিত কারন ব্যাকট্রীয়ার ভারতীয় নাম ছিল বালখ বা বাহ্লীক দেশ।

রাজনৈতিক বৃত্তান্ত :-

  • বর্তমানে যেখানে উত্তর আফগানিস্তানের বল্খ‌, প্রাচীনকালে সেই বল্খ‌ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জুড়ে ছিল ব্যাকট্রিয়া রাজ্য।
  • খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যভাগে আকিমেনীয় সম্রাট প্রথম সাইরাস ব্যাক্ট্রিয়া অধিকার করেন।
  • এই বংশের শেষ রাজা তৃতীয় দারিউসকে পরাজিত করে আলেকজান্ডার ব্যাক্ট্রিয়ায় ম্যাসিডােনীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার অনুগামীদের অনেকে এখানে স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন।
  • খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ব্যাবিলােন শহরে তার মৃত্যু হলে ম্যাসিডােনীয় সাম্রাজ্য তার সেনাপতিগণের মধ্যে বিভক্ত হয়। ব্যাক্ট্রিয়াসহ প্রাচ্য প্রদেশগুলোর অধীশ্বর হন সেনাপতি সেলুকাস।

স্বাধীন ব্যাক্ট্রিয়া রাজ্যের প্রতিষ্ঠা :

  • সেলুকাসের রাজত্বকালে ডিওডােটাস নামে জনৈক গ্রিক ব্যাকট্রিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
  • সেলুকাসের মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রথম এন্টিওকাস ও পৌত্র দ্বিতীয় এন্টিওকাস যথাক্রমে সিংহাসনে আরােহণ করেন। তাদের সময়ও ডিওডােটাসই ব্যাকট্রিয়ার শাসনকর্তা ছিলেন।
  • দ্বিতীয় এন্টিওকাস বা তার পুত্র দ্বিতীয় সেলুকাসের রাজত্বকালে তিনি স্বাধীনতা ঘােষণা করেন।
  • স্বাধীন ব্যাকট্রিয়া রাজ্য প্রতিষ্ঠার অতি অল্প কাল পর প্রথম ডিওডােটাসের মৃত্যু হয়।
  • তার পুত্র দ্বিতীয় ডিওডােটাস ব্যাকট্রিয়ার সিংহাসনে আরােহণ করেন।
  • গ্রিক ঐতিহাসিক পলিবিয়াসের লেখা থেকে জানা যায়, ২১২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু পূর্বে ইউথিডেমাস নামে একজন গ্রিক ভাগ্যান্বেষী তাকে পরাজিত এবং সম্ভবত নিহত করে ব্যাকট্রিয়ার সিংহাসন অধিকার করেন।

প্রথম ইউথিডেমাস :

  • রাজত্বের প্রথম ভাগে সেলুকিড বংশীয় রাজা তৃতীয় এন্টিওকাস ব্যাকট্রিয়া অবরােধ করায় রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়।
  • শেষে পুত্র ডিমেট্রিয়াস ও দূত টিলিয়াসের সাহায্যে ইউথিডেমাস এন্টিওকাসের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। সন্ধির শর্ত অনুসারে ইউথিডেমাস ব্যাক্ট্রিয়ার স্বাধীন রাজা বলে স্বীকৃত হন এবং এন্টিওকাস প্রতিদানস্বরূপ ইউথিডেমাসের নিকট হতে রণহস্তী উপহার পান।
  • তারপর এন্টিওকাস সসৈন্যে ভারত অভিমুখে যাত্রা করেন। সুভাগসেন প্রভৃতি কয়েকজন স্থানীয় ভারতীয় রাজাকে পরাজিত করে তিনি শেযে সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন।
  • এন্টিওকাসের এই ভারত অভিযানের পর ইউথিডেমাস হিন্দুকুশের দক্ষিণে ভারত সীমন্তের দিকে অগ্রসর হন এবং কাবুল উপত্যকা পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেন।
  • ইউথিডেমাসের নামাঙ্কিত সােনা, রূপা, তামা ও মুদ্রা পাওয়া গেছে।
  • আনুমানিক ১৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইউথিডেমাসের মৃত্যু হয়।

প্রথম ডিমেট্রিয়াসের অধীনে ভারত আক্রমণ ও আধিপত্য

  • ইউথিডেমাসের মৃত্যুর পর তার সুযােগ্য পুত্র ডিমেট্রিয়াস পিতৃ-সিংহাসনে আরােহণ করেন।
  • পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গ্রিক আধিপত্যের বিস্তার তার রাজত্বকালের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য ঘটনা।
  • ডিমেট্রিয়াসের ভারত অভিযানের কাহিনি বিধৃত আছে প্রাচীন গ্রিক-রােমক লেখকদের বিবরণীতে, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে এবং তার উৎকীর্ণ মুদ্রায়। অবশ্য এসব তথ্যের ব্যাখ্যা নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
  • গ্রিক লেখক স্ট্র্যাবাে বলেন আলেকজান্ডারের পর দু’জন গ্রিক রাজা ভারত জয় করেন তাদের একজন ডিমেট্রিয়াস, অন্যজন মিনান্ডার।
  • প্রাচীন ইউরােপীয় লেখক টোগাস পম্পিয়াস গ্রিকদের ভারত অভিযান প্রসঙ্গে তিনি ডিমেট্রিয়াসের নাম উল্লেখ করেননি, উল্লেখ করেছেন মিনান্ডার ও এপােলােডােটাসের নাম।
  • পতঞ্জলি তার মহাভাষ্যে জনৈক গ্রিক রাজার সাকেত বা অযােধ্যা বা তার নিকটবর্তী কোনও স্থান এবং মধ্যমিকা বা চিতােড়গড়ের অদূরবর্তী নাগরী অভিযানের কথা বলেছেন। কিন্তু এই গ্রিক রাজ যে কে সে সম্পর্কে তিনি নীরব।
  • গার্গীসংতার যুগপুরাণ অধ্যায়েও গ্রিকদের ভারত অভিযানের উল্লেখ আছে। এই গ্রন্থে বলা হয়েছে যবনরা একে একে সাকেত, পাঞ্চাল, মথুরা ও পাটলিপুত্র অধিকার করবেন। কিন্তু যার নেতৃত্বে এই গ্রিক অভিযান সেই যবন রাজার নাম সম্পর্কে গার্গীসংহিতায় কোনও কথা বলা হয়নি।
  • সিন্ধু অর্থাৎ সিন্ধু নদ বা মধ্য ভারতের কালী সিন্ধুর তীরে গ্রিক সৈন্য সমাবেশের উল্লেখ আছে কালিদাসের ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম’ নাটকে। কালিদাসও প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিক রাজার নাম সম্পর্কে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।
  • বেশির ভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন ভারতীয় সাহিত্যে যে গ্রিক অভিযানের উল্লেখ আছে তার নায়ক হলেন ডিমেট্রিয়াস।
  • খ্যাতনামা ইংরেজ পণ্ডিত টার্ন মনে করেন মিনান্ডার ও এপােলােডােটাসের সক্রিয় সাহায্যে রাজা ডিমেট্রিয়াস এই গ্রিক অভিযানের পরিকল্পনা করেন – মিনান্ডার সসৈন্যে পাঞ্জাবের ভেতর দিয়ে গঙ্গা নদীর তীর ধরে পূর্ব দিকে পাটলিপুত্র পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন, এপােলােডােটাস অগ্রসর হয়েছিলেন দক্ষিণ অভিমুখে, সিন্ধু নদের তীর ধরে। ডিমেট্রিয়াসকে ভারত অভিযানে মিনান্ডার এবং এপােলােডােটাস কতখানি সাহায্য করেছিলেন বা তারা তিনজন আদৌ সমসাময়িক ছিলেন কিনা সে বিষয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
  • কিন্তু পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল যে ডিমেট্রিয়াস অধিকার করেছিলেন, ওই অঞ্চলে পাওয়া তার নামাঙ্কিত মুদ্রাগুলোই তার প্রমাণ।
  • ডিমেট্রিয়াসের বেশির ভাগ মুদ্রার একদিকে দেখা যায় গ্রিক ভাষা ও গ্রিক লিপির ব্যবহার, বিপরীত দিকে লক্ষ করা যায় প্রাকৃত ভাষা ও খরােষ্ঠী লিপির প্রয়ােগ। অনুমান করতে দ্বিধা নেই, বিজিত ভারতীয় অঞ্চলে প্রচলনের উদ্দেশ্যেই ডিমেট্রিয়াস প্রাকৃত ভাষা ও খরােষ্ঠী লিপি সম্বলিত মুদ্রাগুলো উৎকীর্ণ করেছিলেন।
  • মনে হয় নিজের অধিকার সুদৃঢ় করতে ডিমেট্রিয়াস অধিকৃত অঞ্চলে কয়েকটি স্থায়ী সামরিক শিবির স্থাপন করেন। পরে এগুলোকে কেন্দ্র করে মুখ্যত গ্রিক অধিবাসীদের নিয়ে এক একটি শহর গড়ে ওঠে। প্রাচীন শাকল বা পাঞ্জাবের বর্তমান শিয়ালকোট শহরটির পত্তন এভাবেই হয়।
  • মহাভাষ্যের টীকায় সৌবীর বা নিম্ন সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলে দত্তামিত্রি নামে এক নগরের উল্লেখ আছে। ডিমেট্রিয়াস সম্ভবত এ নগরটিও প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ডিমেট্রিয়াসের ভারতে আধিপত্য স্থাপনের সুযোগ নিয়ে ইউক্রেটাইডিস ব্যাকট্রিয়ার একাংশ অধিকার করে নেন।
  • ইউক্রেটাইডিস ও তার উত্তরাধিকারীদের প্রবল বিরােধিতা সত্ত্বেও ডিমেট্রিয়াসের বংশধরেরা ভারতের একাংশে রাজত্ব করতে থাকেন।
  • ডিমেট্রিয়াসের উত্তরাধিকারিগণের মধ্যে দ্বিতীয় ইউথিডেমাস, প্যান্টালিওন, এগাগােক্লিস, এন্টিমেকাস, দ্বিতীয় ডিমেট্রিয়াস, এপােলােডােটাস ও মিনান্ডার সবিশেষ উল্লেখযােগ্য। এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজন ছিলেন প্রথম ডিমেট্রিয়াসের পুত্র, ষষ্ঠজন ভাই এবং শেষােক্তজন জামাতা। তারা কে কখন, কার পর এবং কী পরিস্থিতিতে রাজপদ গ্রহণ করেছেন তা নিশ্চিতরূপে বলার উপায় নেই। তথ্যের অপ্রতুলতাই এক্ষেত্রে প্রধান বাধা।
  • ইউক্রেটাইডিসের প্রবল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কিন্তু ব্যাকট্রিয়ার কিয়দংশ এবং তক্ষশিলা অঞ্চলে তাদের শাসনকর্তৃত্ব বজায় রাখেন।
  • ভ্রাতুস্পুত্রদের অকাল মৃত্যুতে সম্ভবত তাদের পিতৃব্য এপােলােডােটাস সিংহাসনে আরােহণ করেন।
  • ব্যাকট্রিয়া তার হাতছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু কাপিশ, গান্ধার, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধুপ্রদেশ ও গুজরাত উপকূল এপােলােডােটাসের রাজ্যভুক্ত ছিল।
  • এপােলােডােটাসকে পরাজিত করে ইউক্রেটাইডিস কাপিশ অধিকার করেন। শুধু কাপিশ নয়, এপােলােডােটাস বা ডিমেট্রিয়াসের অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের হাত থেকে ইউক্রেটাইডিস আরও অনেক অঞ্চল অধিকার করেন।
  • ইউক্রেটাইডিসের রাজ্যের উত্তরে ও পশ্চিমে শক ও পহ্লবদের অভ্যুত্থান পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তােলে। ইউক্রেটাইডিস যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন তিনি সম্ভবত শকদের ব্যাকট্রিয়ার উত্তর সীমান্তে আবদ্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু পহ্লবরাজ প্রথম মিথ্রিডেটিস ইউক্রেটাইডিসকে পরাজিত করেন। হেরাত ও কান্দাহার সম্ভবত পহ্লবদের অধিকারে চলে যায়।
  • প্রাচীন লেখক জাস্টিনের বিবরণী থেকে জানা যায়, তার এই বিপদের দিনে পুত্র হেলিওক্লিস বিদ্রোহী হন। পুত্রের হাতেই ইউক্রেটাইডিসের জীবনাবসান হয়। পিতা ইউক্রেটাইডিসের মৃত্যুতে আনুমানিক ১৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিংহাসনে বসলেন পিতৃহন্তা হেলিওক্লিস।

মিনান্ডার ও পরবর্তী গ্রিকরাজগণ

  • ইউক্রেটাইডিসের প্রতিদ্বন্দ্বী এপােলােডােটাস লােকান্তরিত হয়েছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মিনান্ডার।
  • শক-পহ্লবদের সঙ্গে ইউক্রেটাইডিস ও তার পুত্রের সংঘর্ষের পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করে ভারতে এক বিশাল রাজ্য গঠন করেন তিনি।
  • প্রথমে ইউক্রেটাইডিস ও পরে তার পুত্র হেলিওক্লিসকে পরাজিত করেই মিনান্ডার তার বিশাল রাজ্য গড়ে তােলেন।
  • পশ্চিমে কাবুল হতে পূর্বে মথুরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মিনান্ডারের তামার ও রূপার মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে।
  • গুজরাত উপকূলও যে তার রাজ্যভুক্ত ছিল তা প্রায় নিশ্চিত।
  • পেশােয়ার-তক্ষশিলা তথা বজৌর উপত্যকায় মিনান্ডারের রাজত্বকালে উৎকীর্ণ একখানি লেখের সন্ধান পাওয়া গেছে।
  • মিনান্ডার শুধু একজন দিগ্বিজয়ী বীরই ছিলেন না, প্রজাহিতৈষণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ প্রভৃতি বিবিধ মানবিক গুণেরও অধিকারী ছিলেন।
  • তার প্রশংসা করে মিলিন্দপঞ্হাে‌ নামে একখানি পালি গ্রন্থে বলা হয়েছে, বীরত্বে ও জ্ঞানে তিনি সারা ভারতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তর্কযুদ্ধেও তিনি ছিলেন অপরাজেয়। এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় শ্রমণ নাগসেনের অনুপ্রেরণায় তিনি বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন।
  • আনুমানিক ১৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যখন মিনান্ডারের মৃত্যু হয় তখন তার পুত্র প্রথম স্ট্র্যাটো নাবালক মাত্র।
  • ফলে রানিমা এগাথাক্লিয়া পুত্রের অভিভাবিকারূপে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন।
  • ইতিমধ্যে ইউ-চি গােষ্ঠীর তাড়া খেয়ে শকরা পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ব্যাকট্রিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
  • শত চেষ্টা সত্ত্বেও হেলিওক্লিস ব্যাক্ট্রিয়া রক্ষা করতে পারলেন না, বাধ্য হয়ে পিছু হটে তিনি সসৈন্যে স্ট্র্যাটোর রাজ্যভুক্ত কাপিশ-গান্ধার অঞ্চলে এসে উপনীত হন।
  • এগাগােক্লিয়াকে পরাজিত করে তিনি এ অঞ্চলে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
  • হেলিওক্লিস স্ট্র্যাটোকে পুনরায় পরাজিত করে বিতস্তা অববাহিকার একাংশ অধিকার করেন।
  • বৃদ্ধ বয়সে স্ট্র্যাটো তার পৌত্র দ্বিতীয় স্ট্র্যাটোকে সহযােগী প্রশাসক নিযুক্ত করেন কিন্তু হেলিওক্লিস বা তার উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলেন না।
  • পূর্ব পাঞ্জাবের আধিপত্য নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
  • আনুমানিক ১২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হেলিওক্লিসের মৃত্যু হলে এন্টিয়ালকিডাস তার স্থলাভিষিক্ত হন।
  • সমসাময়িক শুঙ্গরাজ ভাগভদ্র বা ভদ্রকের সঙ্গে এন্টিয়ালকিডাস সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।
  • হেলিওডােরাস নামে জনৈক গ্রিককে নিজের দূতরূপে তিনি শুঙ্গ রাজসভায় পাঠান।
  • শুঙ্গরাজ্যে এসে গ্রিক দূত তার উপাস্য দেবতা বাসুদেবের উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রদেশে এক গরুড়স্তম্ভ নির্মাণ করেন।
  • এন্টিয়ালকিডাস লিসিয়াস নামে আর একজন গ্রিক রাজার সঙ্গে একযােগে কিছু তাম্রমুদ্রা উৎকীর্ণ করেন। এই মুদ্রার প্রধান পৃষ্ঠে লিসিয়াসের নাম লেখা আছে আর বিপরীত দিকে খােদিত আছে এন্টিয়ালকিডাসের নাম।
  • শক-পহ্লবদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার তাগিদে বিবদমান দু’টি গ্রিক গােষ্ঠী অন্তত কিছু দিনের জন্য পারস্পরিক বিভেদ ভুলে মৈত্রীর বন্ধনে ধরা দিয়েছিল।

গ্রিক প্রভুত্বের বিলােপ

  • এন্টিয়ালকিডাস ও লিসিয়াসের মৃত্যুর পর শক-পহ্লব জাতি নিরন্তর আক্রমণ ও উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে গ্রিক শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • খ্রিস্টপর্ব ১ম শতকের দ্বিতীয় পাদে টেলিফাস প্রমুখ গ্রিক রাজাদের পরাজিত করে শক নৃপতি মউয়েস কাশি গান্ধার ও পশ্চিম পাঞ্জাব অধিকার করেন।
  • গ্রিক শাসনের একেবারে অন্তিমপর্বে হারমেয়ুস কাবুল উপত্যকায় ও হিপপােসট্রেটাস পূর্ব পাঞ্জাবে রাজত্ব করতেন। মুদ্রার সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, প্রথম জন ইউক্রেটাইডিস-এন্টিয়ালকিডাসের গােষ্ঠীভুক্ত ছিলেন, দ্বিতীয় জন ছিলেন ডিমেট্রিয়াস-লিসিয়াসের গােষ্ঠীর।
  • ক্রমবর্ধমান শক-পহ্লব আক্রমণে বিপর্যস্ত হারমেয়ুস ও হিপ্পােসট্রেটাস আত্মরক্ষার তাগিদে পরস্পর সংঘবদ্ধ হন।
  • পরস্পরের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করতে হারমেয়ুস হিপ্‌পোসট্রেটাসের কন্যা বা বােন ক্যালিওপেকে বিবাহ করেন।
  • পহ্লবরাজ স্পলিরিস পরাজিত করে কাবুল উপত্যকা অধিকার করেন।
  • শকরাজ প্রথম এজেস হিপপােসট্রেটাসকে পূর্ব পাঞ্জাব থেকে বিতাড়িত করে গ্রিক রাজত্বের অবসান ঘটায়।

ভারতে শক-পহ্লব আধিপত্য

শকদের আদি ইতিহাস

  • শকরা ছিলেন আসলে মধ্য এশিয়ার এক যাযাবর গােষ্ঠী।
  • অতি প্রাচীনকালেই মধ্য এশিয়ার কয়েকটি স্থানে তাদের বসতি গড়ে উঠেছিল।
  • আধুনিক কিরগিজস্তানের উত্তর-পূর্বপ্রান্তস্থিত ইশিক্কুল হ্রদ সংলগ্ন অঞ্চলই ছিল এই শকদের এক প্রাচীন আবাস।
  • কালক্রমে ইউ-চি, হুণ প্রভৃতি প্রতিদ্বন্দ্বী যাযাবর গােষ্ঠীর আক্রমণে তারা এই বাসভূমি ত্যাগ করে একটু পশ্চিমে সরে এসে উজবেকিস্তান ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করেন।
  • শকদের দক্ষিণাভিমুখী একটি শাখা ইরানের সিস্তান অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।
  • উজবেকিস্তানে শকরা কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির মধ্য দিয়ে কাশ্মীরে এসে উপনীত হয় আর সিস্তানের শকরা বেলুচিস্তান হয়ে বােলান গিরিপথের ভেতর দিয়ে সিন্ধু উপত্যকায় প্রবেশ করে।

শকরাজ মউয়েস

  • মউয়েসই শকদের প্রথম উলেখযােগ্য নৃপতি।
  • তিনি যখন সদলে কাপিশ-গান্ধার অঞ্চলে এসে উপনীত হন তখন সেখানে টেলিফাস নামে জনৈক যবনরাজ রাজত্ব করছিলেন।
  • টেলিফাসকে পরাজিত করে তিনি তার রাজ্য দখল করেন।

পহ্লবরাজ ভােনােনেস :

  • মউয়েস যখন কাপিশ, গান্ধার ও পাঞ্জাবে শক আধিপত্য বিস্তার করছেন তখন কান্দাহার ও হেরাতেও রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে ভােনােনেসের হাত ধরে।
  • শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি তার রাজ্য দু’টি অঞ্চলে বিভক্ত করেন। তার ভাই স্পলহাের হলেন এক অঞ্চলের সহযােগী প্রশাসক, অন্য অঞ্চলের সহযােগী প্রশাসক হলেন তার ভ্রাতুস্পুত্র স্পলগদম।

স্প্লহোর

  • ভােনােনেসের মৃত্যুতে তার ভাই স্পলহাের পহ্লব সিংহাসনে আরােহণ করেন।
  • রাজা হয়েই স্পলহাের তার পুত্র স্পলগদমকে রাজ্যের যুগ্ম প্রশাসক নিযুক্ত করেন।
  • তারা শীঘ্রই ভােনােনেসের অপর এক ভাই স্পলিরিসের হাতে পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত হন।

স্পলিরিস

  • স্পলিরিস শক্তিশালী নৃপতি ছিলেন।
  • গ্রিকরাজ হারমেয়ুসকে পরাজিত করে কাবুল উপত্যকায় তিনি পহ্লব আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
  • স্পলিরিস রাজত্বের শেষের দিকে এজেস নামে জনৈক ব্যক্তিকে তিনি সহযােগী প্রশাসক নিয়ােগ করেন।

এজেস

  • মউয়েস ও স্পলিরিসের মৃত্যুর পর শক ও পহ্লব রাজ্যের আধিপত্য এজেসের হাতে চলে যায় ।
  • গ্রিক বা যবনদের হাত হতে পূর্ব পাঞ্জাব অধিকার করে এজেস তার রাজ্যের আয়তন আরও বৃদ্ধি করেন।
  • স্পলিরিসের মৃত্যুর পর এজেস একাকীই রাজকার্য পরিচালনা করতেন কিন্তু পরে তিনি এজিলিসকে সহযােগী প্রশাসক নিযুক্ত করেন।

এজিলিস

  • এজিলিস সম্ভবত এজেসের পুত্র বা ভ্রাতুস্পুত্র ছিলেন।
  • জম্মু ও কাশ্মীরের কিছু অংশে এজিলিসের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • মহাক্ষত্রপ পতিক এসময় তক্ষশিলায় প্রদেশপালের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • মথুরা অঞ্চলে দত্ত ও মিত্র রাজাদের পরাজিত করে এজিলিস মথুরায় শক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
  • মথুরা বিজয়ে যিনি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন সেই রাজুবুল বা রজবুল সেখানে ক্ষত্ৰপ নিযুক্ত হন। রাজুবুল পরে মহাক্ষত্ৰপ উপাধি ধারণ করেন।
  • প্রথম দিকে এজিলিস একাই রাজকার্য পরিচালনা করতেন। শেষের দিকে তিনি অবশ্য একজন সহযােগীর সাহায্য গ্রহণ করেন। তার এ সহযােগীর নাম দ্বিতীয় এজেস। তিনি সম্ভবত এজিলিসেরই পুত্র ছিলেন।

দ্বিতীয় এজেস :

  • এজিলিসের মৃত্যুতে দ্বিতীয় এজেস শক রাজ্যের অধীশ্বর হন।
  • তার সিংহাসনে আরােহণের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের চারদিকে গােলযােগ দেখা দেয়। উত্তর-পশ্চিম ভারতে গােন্ডোফারেস নামে জনৈক রাজনৈতিক ভাগ্যান্বেষীর আবির্ভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তােলে।
  • একটি একটি করে অঙ্গরাজ্যগুলো এজেসের হাতছাড়া হয়ে যায়। তার কর্তৃত্ব সংকুচিত হতে হতে শেষের দিকে পাঞ্জাবেই তা আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
  • গােন্ডােফারেস শীঘ্রই পাঞ্জাব অধিকার করেন।
  • অস্পবর্মা দ্বিতীয় এজেসের এক প্রদেশপাল ছিলেন। সুযােগ বুঝে তিনি গােন্ডােফারেসের পক্ষে যােগদান করেন। দ্বিতীয় এজেসের রাজ্য ধ্বংস হল। শকরাজ্যের ধ্বংসস্তুপের উপর নতুন এক পহ্লব রাজ্য গড়ে উঠল। নতুন এই পহ্লব রাজ্যটির স্থপতি গােন্ডােফারেস।

পহ্লবরাজ গােন্ডোফারেস :

  • কান্দাহার অঞ্চলে পহ্লবরাজ ওর্থেগুনেসের সহকারী প্রশাসকরূপে গােন্ডােফারেস তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
  • যে কান্দাহারে ওর্থেগনেস বা গােন্ডােফারেসের রাজনৈতিক অভ্যুদয় ঘটে সেই কান্দাহারে পূর্বে শর্করা রাজত্ব করতেন।
  • সম্ভবত দ্বিতীয় এজেসকে পরাজিত করে তারা কান্দাহার অধিকার করেন। কান্দাহার জয় করেই ওর্থের্গনেস সন্তুষ্ট হলেন।
  • কিন্তু উচ্চাভিলাষী গােন্ডােফারেস কেবল কান্দাহার জয় করেই সন্তুষ্ট ছিলেন না।
  • শকরাজ দ্বিতীয় এজেসের দুর্বলতার পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করলেন গােন্ডােফারেস।
  • প্রশাসনিক স্বার্থে পূর্ব ইরান থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত তার রাজ্যটিকে গােন্ডােফারেস কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করেন। এক একটি অঞ্চলের শাসনভার এক একজন প্রদেশপালের হাতে ন্যস্ত হয়।
  • সিস্তান-কান্দাহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন তার ভ্রাতুষ্পপুত্র অব্দগস।
  • তক্ষশিলার শাসনভার গ্রহণ করেন অস্পবর্মা এবং পরে তার ভ্রাতুস্পুত্র সস।
  • সপেদন ও সতবস্ত্রর উপর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শাসনভার অর্পিত হয়।

পরবর্তী পহ্লবরাজ

  • গােন্ডোফারেসের মৃত্যুর পর সম্ভবত তার ভ্রাতুপুত্র অব্দগস পহ্লব সিংহাসনে আরােহণ করেন।
  • পরবর্তী পহ্লবরাজ সম্ভবত পকুর বা প্যাকোরেস। তিনি সিস্তান অঞ্চলে রাজত্ব করেন।
  • সনবরেস এবং আর্সসেস নামে আরও দু’জন পহ্লব রাজার মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথমজন সিস্তান তথা পূর্ব ইরানে এবং শেষােক্ত জন কান্দাহারে রাজত্ব করতেন।

পহ্লব রাজত্বের অবসান

  • গােন্ডােফারেসের মৃত্যুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কুষাণরাজ কুজুল কদফিসেস কাবুল উপত্যকা অধিকার করেন।
  • ৬৫ খ্রিস্টাব্দের কিছু পূর্বে কুজুলের পুত্র বিম কদফিসেস গান্ধার জয় করেন। বিম কদফিসেস পাঞ্জাবও অধিকার করেন।
  • নিম্ন সিন্ধু অববাহিকায় তখনও পহ্লবরা রাজত্ব করছিলেন। কিন্তু প্রথম কণিষ্ক সেখান থেকেও পহ্লবদের বিতাড়িত করেন।

পশ্চিম ভারতে শক শক্তির আত্মপ্রকাশ

ক্ষত্রপ ভূমক

  • কুষাণদের হাতে ভাগ্য বিপর্যয়ের ফলে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর ভারতে শক প্রভুত্বের অবসান ঘটে।
  • কিন্তু শীঘ্রই শকরা পশ্চিম ভারতে পরাক্রান্ত রাজনৈতিক শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। পশ্চিম ভারতে শক অভ্যুত্থানের যিনি নায়ক তার নাম ভূমক।
  • ক্ষহরাতবংশীয় এই শক নায়ক কুষাণরাজ প্রথম কণিষ্কের সমসাময়িক ছিলেন।
  • ভূমক কখনও স্বাধীনতা ঘােষণা করেননি। তিনি মুদ্রা উৎকীর্ণ করেছেন সত্য কিন্তু মুদ্রায় তিনি নিজেকে ক্ষত্ৰপ বলেই পরিচয় দিয়েছেন, কখনও নিজেকে রাজা বা মহাক্ষত্রপ বলে বর্ণনা করেননি।
  • পশ্চিমে গুজরাত থেকে পূর্বে মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ড তার শাসনাধীন ছিল। ভূমকের মুদ্রায় ব্রাহ্মীর সঙ্গে খরােষ্ঠী লিপিও ব্যবহৃত হয়েছে।

ক্ষত্ৰপ নহপান :

  • ভূমকের পর নহপান ক্ষত্রপপদে অভিষিক্ত হন।
  • সাতবাহন রাজ্যেও এসময় দুর্দিন চলছিল। এ সুযােগে নহপান সাতবাহন রাজ্যের এক সুবিস্তীর্ণ অঞ্চল অধিকার করে বসেন।
  • তার আমলের একখানি লেখ থেকে জানা যায় মালবরা একবার কোনও উত্তমভদ্ররাজকে অবরুদ্ধ করেন। নহপানের জামাতা ঋষভদত্ত মালবদের পরাজিত করে আক্রান্ত উত্তমভদ্ররাজকে মুক্ত করেন ও শেষে আজমীঢ় হ্রদে পুণ্যস্নান করেন।
  • ঋষভদত্ত শুধু নহপানের জামাতা নন তিনি নহপানের অধীনস্থ এক অঞ্চল প্রশাসকও বটে।
  • সাতবাহন রাজাদের পরাজিত করে নহপান মহারাষ্ট্র অধিকার করেন।
  • অধিকৃত মহারাষ্ট্র গােবর্ধন-আহার ও মামাল-আহার নামে দু’টি জেলায় বিভক্ত হল। জেলা দু’টির শাসনভার পেলেন তার কন্যা দক্ষমিত্রার স্বামী, তার নিজের জামাতা ঋষভদত্ত।
  • সাতবাহনরাজ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি ১২৪ খ্রিস্টাব্দের শেষার্ধে বা পরবর্তী বছরের প্রথম পর্বে নহপান ও ঋষভদত্তকে মহারাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করেন। গৌতমীপুত্রের সঙ্গে যুদ্ধে নহপান শুধু পরাজিতই হননি, নিজের প্রাণও বিসর্জন দেন।

কার্দমক চষ্টন :

  • গৌতমীপুত্রের হাতে নহপানের আকস্মিক ভাগ্যবিপর্যয়ে কুষাণ কর্তৃপক্ষ চষ্টনকে পশ্চিম ভারতের ক্ষত্ৰপ নিযুক্ত করেন।
  • নহপানের মতাে চষ্টনও শক কিন্তু তাদের বংশ ভিন্ন। নহপান ক্ষহরাতবংশীয় কিন্তু চষ্টন কার্দমক পরিবারভুক্ত।
  • পৌত্র রুদ্রদামার সহযােগিতায় তিনি ৫২ শকাব্দ বা ১৩০ খ্রিস্টাব্দে কচ্ছ উপকূলের অন্ধৌ গ্রামে একখানি লেখ উৎকীর্ণ করেন। নহপানকে পরাজিত করে গৌতমীপুত্র পূর্বে এ অঞ্চল অধিকার করেছিলেন।
  • টলেমি তার ভূগােল গ্রন্থে চষ্টনকে উজ্জয়িনীরাজ বলে উল্লেখ করেছেন। উজ্জয়িনী পূর্বে গৌতমীপুত্রের রাজ্যভুক্ত ছিল।

মহাক্ষত্ৰপ রুদ্রদামা

  • চষ্টনের মৃত্যর পর তার পৌত্র রুদ্রদামা মহাক্ষত্ৰপ পদে অভিষিক্ত হলেন।
  • ১৫০ খ্রিস্টাব্দে উৎকীর্ণ তার জুনাগড় লেখে তার শাসনকালের বিশদ বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে।
  • তার অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল আকর বা পূর্ব মালব, অবন্তি বা পশ্চিম মালব, অনূপ – নীবৃৎ বা নর্মদা অববাহিকার মান্ধাতা, অথবা মহেশ্বর অঞ্চল, কুকুর বা নিম্ন সিন্ধু অববাহিকা ও পশ্চিম বিন্ধ্য পর্বতমালার মধ্যবর্তী অঞ্চল, আনর্ত বা দ্বারকা অঞ্চল, সুরাষ্ট্র, শ্বভ্র বা সবরমতী অববাহিকা, কচ্ছ, মরু বা মাড়ােয়ার, সিন্ধু বা নিম্ন সিন্ধু উপত্যকার পশ্চিমাঞ্চল, সৌবীর বা নিম্ন সিন্ধু উপত্যকার পূর্বাঞ্চল, অপরান্ত বা উত্তর কোঙ্কণ এবং নিষাদ বা পশ্চিম বিন্ধ্য ও আরাবল্লীর পার্বত্য অঞ্চল।
  • তার রাজত্বের প্রথম বছরেই জুনাগড়ের নিকটবর্তী সুদর্শন হ্রদের বাঁধে অতিবৃষ্টির কারণে ফাটল ধরে। মৌর্যরাজ চন্দ্রগুপ্ত এই জলাধারটি নির্মাণ করেন এবং তার পৌত্র অশােক হ্রদটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করেন। অসামান্য তৎপরতার সঙ্গে সুবিশাল জলাধারটিকে নতুন করে নির্মাণ করেন। হ্রদটির বাঁধ তিনগুণ দৃঢ় ও বিস্তৃত করা হয়। হ্রদটি সুন্দরতর হয়ে ওঠে। জলাধারটির সংস্কার করতে রুদ্রদামাকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
  • রুদ্রদামা তার এক কন্যার সঙ্গে সাতবাহনরাজ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণির এক পুত্রের বিবাহ দেন।

দামঘ্স‌দ ও শক শাসনের অবসান

  • সম্ভবত তার রাজত্বের শেষ পর্বে প্রশাসনের স্বার্থে রুদ্রদামা তার পুত্র দামঘ্স‌দকে ক্ষত্রপপদে নিযুক্ত করেন।
  • রুদ্রদামার পুত্র দামঘ্‌সদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই রাজপরিবারে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গৃহবিবাদ এড়াবার জন্য উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পিতা-পুত্র পরম্পরার পরিবর্তে দাদা-ভাই পারম্পর্য প্রবর্তিত হল।
  • খ্রিস্টীয় ২য় শতকের শেষের দিকে আভীররাজ ঈশ্বরদত্ত তাে একবার শকরাজ্য অধিকার করেন। রুদ্রদামার কনিষ্ঠ পুত্র প্রথম রুদ্ৰসিংহ কোনও প্রকারে অবস্থার সামাল দেন।
  • সাতবাহনরাজ যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণিকে কিছুতেই প্রতিরােধ করা গেল না। তিনি ক্ষত্ৰপ রাজ্যের কিয়দংশ বলপূর্বক অধিকার করেন।
  • খ্রিস্টীয় ৩য় শতকের মধ্যভাগে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ কার্দৰ্মক শকদের হাতছাড়া হয়।
  • রাজস্থান ও পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে মালবরা এবং মধ্যপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে শক শ্রীধরবর্মা স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
  • গুজরাতের সর্বশেষ মহাক্ষত্রপ তৃতীয় রুদ্ৰসিংহ।